অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : বছরের প্রথম দিন দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক নিয়ে আসছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এর মধ্যে দিয়ে প্রথমবারের মতো বই উৎসবের অংশ নিতে যাচ্ছে দেশের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা। প্রথম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত সব বই এখন ‘মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক’ এর মাধ্যমে পড়তে পারবে তারা।
এনসিটিবি’র চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ফরহাদুল ইসলাম বাসসকে বলেন, প্রথম থেকে দশম শ্রেণীর দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক তৈরির জন্য কাজ করছে এনসিটিবি। ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যেই এর কাজ সম্পন্ন হবে।
তিনি বলেন, ‘৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা হার্ড ডিস্কের মাধ্যমে মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক পৌঁছে দেব। এতে বছরের প্রথম দিন বই উৎসবের সঙ্গে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরাও পাবে নতুন বই।’
তিনি জানান, ১ জানুয়ারি থেকে এনসিটিবি’র ওয়েবসাইটে মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক পাওয়া যাবে। শিক্ষার্থীরা তাদের প্রয়োজন মত ডাউনলোড করে নেবে। যে কেউ তাদের প্রয়োজন মত এই বই ফ্রি ডাউনলোড করতে পারবে।
মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক একটি ব্যতিক্রমী বই পড়ার ধারনা। ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমবার মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক উদ্বোধন করেন এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেন। মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক উদ্বোধনের সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ বইটি যাতে প্রতিবছর শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া যায়, এ বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করেন এবং এই বইয়ের কপিরাইট যাতে বাংলাদেশের থাকে এ বিষয়েও গুরুত্ব আরোপ করেন।
২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশের দৃষ্টি প্রতিবন্ধীসহ অন্যান্য প্রতিবন্ধীরা মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক ব্যবহার করছে। মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক এমন একটি বই যা দেখা যায় এবং শোনা যায়। সব ধরনের প্রতিবন্ধী ও অপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা এটি ব্যবহার করতে পারে। এটুআই এর কারিগরি সহায়তায় চট্টগ্রামের ইপসা নামের একটি প্রতিষ্ঠান এই মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক এতদিন পর্যন্ত বিনামূল্যে সরবরাহ করে আসছিলো। ২০২৩ সাল থেকে সরকারি অর্থায়নে এনসিটিবি এই বই সরবরাহ করবে।
মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক এর উদ্ভাবক এটুআই-এর ন্যাশনাল কনসালটেন্ট, একসিসেবিলিটি ভাস্কর ভট্টাচার্য বাসসকে বলেন, মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক যেকোনো কম্পিউটার, ল্যাপটপ, এন্ড্রয়েড ফোন এমনকি দুই-তিনশ’ টাকার যেকোন মিডিয়া প্লেয়ার এর মাধ্যমেও বাজানো সম্ভব। সমাজসেবা মন্ত্রণালয় এবং এটুআই এর যৌথ উদ্যোগে একসিসেবল বুক রিডার নামে একটি প্লেয়ার তৈরি করে এর আগে বিনামূল্যে প্রায় ১২০০ ছেলেমেয়েকে এই বই দেয়া হয়েছে । তারা এই এ্যাকসিসেবল বুক রিডার ব্যবহার করে মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক ব্যবহার করছে।
তিনি জানান, গ্রামে গঞ্জে দুই তিনশ টাকার এমপিজি প্লেয়ার এর মাধ্যমেও শিক্ষার্থীরা এটি ব্যাবহার করতে পারবে। মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক ব্যাবহারের জন্য সকল ধরনের এপস বিনামূল্যে ‘প্লে স্টোরে’ পাওয়া যায়। যেমন; কোটা ডিজিটিং, এফএস রিডার কিংবা ইজি রিডার। এর প্রত্যেকটাই বিনামূল্যে পাওয়া যাবে।
ভাস্কর ভট্টাচার্য নিজে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। নিজের শিক্ষা জীবনের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, আমরা যখন পড়াশুনা করেছিলাম তখনও কিন্তু আমরা প্রযুক্তি নির্ভরই ছিলাম। তবে, সেটা ম্যানুয়াল প্রযুক্তি ছিল। ক্যাসেট প্লেয়ার নামের একটা জিনিস ব্যবহার করতাম। ওয়াকম্যান ব্যবহার করতাম। এখন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে। কারণ, তারা জানে যে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি এই তিনটি তাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রযুক্তি বাদ দিয়ে তাদের শিক্ষা গ্রহণ কার্যকর হবে না, সেজন্য তারা স্মার্ট ফোনসহ নানা ধরনের টেকনোলজি ব্যবহার করে।
মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক উদ্ভাবনের জন্য এর উদ্ভাবক এবং বাংলাদেশ সরকার বেশ কিছু আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেছে। তার মধ্যে ডব্লিউএসআইএস পুরস্কার, ইউএনডব্লিউআর পুরস্কার, ইউনেস্কো পুরস্কার এবং হেনরি ভাস্কার দ্য এওয়ার্ড অন্যতম।
Leave a Reply